অর্থ, সময়, শক্তি এ তিনটি মূলত প্রধান গৃহসম্পদ। প্রতিটি পরিবারে এসব সম্পদ কম বেশি-বিভিন্নরূপে রয়েছে। এ সম্পদগুলো ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জন করে থাকি। সম্পদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রতিটি সম্পদই সীমিত। এই সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পারিবারিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব হয়।
অর্থ- অর্থ পরিবারের একটি অন্যতম প্রধান বস্তুগত সম্পদ। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন। প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে এ অর্থ উপার্জন করে। চাকুরি, ব্যবসা, পুঁজি বিনিয়োগ বা যেকোনো পেশার মাধ্যমে পরিবার টাকা পয়সা আয় করে। অন্যান্য বস্তুগত সম্পদের মধ্যে অর্থের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। কারণ অর্থের ক্রয়ক্ষমতা আছে। অর্থের বিনিময়ে আমরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা সংগ্রহ করি। অর্থ দিয়েই পরিবারের সকল ব্যয়ভার মেটানো হয়।
অর্থ যে কাজগুলো করে-
বিনিময়ের মাধ্যম - অর্থ হলো জিনিস বিনিময়ের মাধ্যম। অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায়।
মূল্যের পরিমাপক- টাকার অঙ্কে আমরা জিনিসের দাম জানতে পারি।
ঋণ পরিশোধের মান ঋণের লেনদেন অর্থের মাধ্যমে হয়।
সঞ্চয়ের ভান্ডার ভবিষ্যতের জন্য আমরা অর্থ সঞ্চয় করতে পারি।
পারিবারিক জীবনে অর্থকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের চাহিদাগুলো সীমিত অর্থ দ্বারাও পূরণ করা সম্ভব। অর্থকে পরিকল্পনা করে ব্যয় করতে হয়। অর্থ ব্যয়ের জন্য পূর্ব পরিকল্পনাকে বাজেট বলে। সকলেরই বাজেট করে অর্থ ব্যয় করার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারব। আর অকারণে অর্থ ব্যয় করার বদাভ্যাস গড়ে উঠবে না। আমরা মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হতে শিখব।
সময় – মানবীয় সম্পদগুলোর মধ্যে সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সময় প্রকৃতির নিয়মে বয়ে চলে। তবে জন্মের পর থেকেই আমরা এ সম্পদের অধিকারী হয়ে যাই। সময় সবচেয়ে সীমিত সম্পদ এবং একে পরিমাপ করা খুবই সহজ। এর পরিমাণ সবার জন্য সমান। যেমন- সবার জন্যই চব্বিশ ঘন্টায় একদিন। কখনোই একে বাড়ানো যায় না। একে সঞ্চয়ও করা যায় না। তাই সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। অযথা সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সময়ের সঠিক পরিকল্পনা করে আমরা যদি কাজ করি, তাহলে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারব এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।
রূপম প্রতিদিন ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে। সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এগারটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকে। বাসায় ফিরে বিকালে মাঠে খেলতে যায়। রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আবার পড়ালেখা করে। রাত এগারটায় ঘুমিয়ে পড়ে। দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ, বিশ্রাম সবই সে সময়মতো করে। এভাবে রূপমের মতো আমরা সবাই সময় তালিকা করে আমাদের প্রতিদিনের সব কাজ করতে পারি। তাহলে মূল্যবান সময় অবহেলায় নষ্ট হবে না। বরং সময়মতো সব কাজ করে, আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
শক্তি - শক্তি একটি মানবীয় সম্পদ। শক্তি ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম কাজ করে লক্ষ্যে পৌঁছাই। এ সম্পদটা আমরা অর্জন করি। সবার শক্তি এক রকম নয়। প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখি কেউ শক্তি দিয়ে অনেক কাজ করতে পারে, আবার কেউ অল্পতেই শক্তি হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য সম্পদের মতো শক্তি ব্যবহারেও আমাদের যত্নবান হতে হয়। যেকোনো কাজ এমনভাবে করতে হবে, যাতে সে কাজে আমাদের কম শক্তি ব্যয় হয়। প্রতিদিন আমাদের শক্তি ব্যবহার করে অনেক কাজ করতে হয়। সুতরাং আমাদের কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য সম্পদের মতো শক্তিও সীমিত। তাই এই শক্তিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হলে একটা কর্মতালিকা করতে হবে। যার মাধ্যমে শক্তির অপচয় রোধ করা যায়।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলু গ্রামে থাকে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দূর থেকে পানি আনে। এরপর ঘর, উঠোন ঝাড়ু দেয়, তারপর পুকুরে যেয়ে কাপড় ধুয়ে গোসল করে স্কুলে যায়। ক্লাসে সে প্রতিদিন ক্লান্তিতে ঝিমাতে থাকে। ফলে ক্লাসের পাঠে সে মনোযোগ দিতে পারে না।
পরপর অনেকগুলো কঠিন কাজ করার ফলে নীলুর শক্তি শেষ হয়ে যায়। ফলে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নীলুর মতো অবস্থায় না পড়তে হলে শক্তি ব্যবহারের উপায়গুলো জেনে রাখা দরকার।
কাজ ১- ছুটির দিনে তোমার সময় ও কাজের তালিকা তৈরি করো। ২- তোমার হাত খরচের টাকা থেকে কীভাবে সঞ্চয় করবে লেখো। |